English

23 C
Dhaka
রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
- Advertisement -

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে নতুন করে পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে: শিল্পমন্ত্রী

- Advertisements -

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, ক্ষুদ্র শিল্পের উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে নতুন করে ভাবার ও পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে। তাঁরাই আমাদের শিল্পোন্নয়ন তথা সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির ভিত্তি রচনা করে। ক্ষুদ্র শিল্প থেকেই বৃহৎ শিল্পের সৃষ্টি। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান বিসিক থেকে তারা প্রশিক্ষণ, প্লট বরাদ্দসহ বিভিন্ন কারিগরি সুবিধা পেয়ে থাকে। তবে এন্টারপ্রাইজ সৃষ্টির মূল ভিত্তি মূলধন বা পুঁজির অভাবে প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাগণের উদ্যোগসমূহ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয় বা বাস্তব রূপলাভ করতে পারে না। সেজন্য বিসিকের আওতায় কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা বিসিক ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা যেতে পারে।

মন্ত্রী আজ রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের ওয়েসিস মিলনায়তনে বিসিক আয়োজিত ‘উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে বিসিকের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও ‘কারুশিল্পী পুরস্কার ১৪৩০’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আগামী ৩ বছরের মধ্যে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটাতে যাচ্ছে। সেজন্য এখন থেকেই আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি নিতে হবে। বিশেষ করে পাট, চামড়া, ফার্মাসিউটিক্যালস সহ সম্ভাবনাময় শিল্প খাতসমূহের উন্নয়ন ও মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারের পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারেও গুণগত মানসম্পন্ন পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের মানোন্নয়নপূর্বক কোয়ালিটি প্রোডাক্ট উৎপাদন করে তাদের মাধ্যমে আউটসোর্সিং করতে পারে। তিনি আরো বলেন, ক্ষুদ্র শিল্পের উদ্যোক্তারা অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির সুফল যাতে পায়, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, কারুশিল্পীগণ তাঁদের সুনিপুণ মেধা, মনন, দক্ষতা ও কারুকার্যে তৈরি শিল্পকর্মে আমাদের গ্রাম বাংলার সংস্কৃতিকে চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। মন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘কারুশিল্পী পুরস্কার ১৪৩০’ প্রদানের মাধ্যমে কারুশিল্প খাতে নব নব উদ্যোগ সৃষ্টি হবে ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পাবে যা প্রকারান্তরে এ শিল্পের প্রসারে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে। তিনি এসময় পুরস্কারপ্রাপ্ত সকল কারুশিল্পীদের শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

বিসিকের চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) সঞ্জয় কুমার ভৌমিক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ হিসেবে বক্তৃতা করেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর এবং ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির মুখ্য উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। আলোচনা করেন বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য মো. হাফিজুর রহমান এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত। উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন এফবিসিসিআই’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আমিন হেলালী ও সুইজারল্যান্ডের জেনেভাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর মো. সেলিম হোসেন। ‘কারুশিল্পী ১৪৩০ পুরস্কার’ প্রাপ্তদের মধ্য থেকে অনুভূতি ব্যক্ত করেন ‘কারুরত্ন’ গোপেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী ও ‘কারুগৌরব’ বীথিকা জোদ্দার।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, বিসিক দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ৪০ হাজার একর জমিতে ১০০টি পরিবেশবান্ধব শিল্পপার্ক স্থাপনের জন্য মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ২০৪১ সালের মধ্যে ২ কোটি লোকের কর্মসংস্থান হবে এবং রপ্তানি আয় ৪০০ হতে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বিসিকের ৮২টি শিল্পনগরীতে ৫৯৮৫টি শিল্প স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। বিসিকের চামড়া শিল্পনগরীতে ১৬৩ টি ট্যানারি শিল্প ইউনিটের অনুকূলে ২০৫ টি শিল্পপ্লট বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়া চামড়া শিল্পনগরীতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) চালু করা হয়েছে। সিনিয়র সচিব বলেন, দেশের সিংহভাগ ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ বিসিক শিল্পনগরীগুলোতে অবস্থিত। এছাড়াও ঔষধ শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনের লক্ষ্যে বিসিকের সহায়তায় মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় দেশের প্রথম বিশেষায়িত অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগ্রেডিয়েন্টস (এপিআই) শিল্পপার্ক নির্মিত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বাইরেও বিসিক আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রচারে সহায়ক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কারুশিল্পীদের উদ্ভাবিত শিল্পপণ্য জনসাধারণের মাঝে প্রচার এবং নান্দনিক কারুপণ্য উদ্ভাবন ও উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে ‘বিসিক নকশা কেন্দ্র’ ১৯৮২ সাল থেকে ‘কারুশিল্পী পুরস্কার’ প্রদান শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় এবছর ১০টি বিষয়ে ১০জন কারুশিল্পীকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ১জন শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পীকে ‘কারুরত্ন’ পুরস্কার এবং অন্য ৯জন কারুশিল্পীকে ‘কারুগৌরব’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।

মন্ত্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত কারুশিল্পীদের হাতে সনদপত্র, ক্রেস্ট ও চেক তুলে দেন। অনুষ্ঠানে ‘কারুরত্ন’ পুরস্কারের জন্য সম্মানী হিসেবে ৫০ হাজার টাকা ও ‘কারুগৌরব’ পুরস্কারের জন্য সম্মানী হিসেবে ৩০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।

মন্ত্রী পরে বিসিকের প্রদর্শনী কেন্দ্র ঘুরে দেখেন।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন