দিনাজপুর শহরের মালদহপট্রি, বাসুনিরয়া পট্টি সড়কে যে কেউ গেলেই শুনতে পাবেন, এই যে আপা, তিন শ’র মাল এক শতে নেন। নিয়ে যান আপা, পানির দরে। আর এই হাঁকডাক ছিল প্রতি শুক্রবার দিনাজপুরের বউ বাজারের। এখন স্বল্প-মধ্যবিত্তদের কেনাকাটার নির্ভরতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে বউ বাজারটি।
নারী-পুরুষ সকলের কাপড় পাওয়া গেলেও ক্রেতারা সব নারী হওয়ায় এই বাজারের নাম বউ বাজার। ঈদকে সামনে রেখে দিনাজপুরের বউ বাজারটি এখন জমজমাট। উপচেপড়া ভিড়। ঈদুল ফিতর যতই সামনে আসছে ততই জমে উঠছে বউ বাজারটি।
নিজেদের আর্থিক অভাব দূর করতে ও ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে দোকান কর্মচারীরা শহরের মালদহপট্টি, বাসুনিয়াপট্টি, গরুহাটি, চুড়িপট্টি সড়কে বউ বাজার বসায় প্রতি শুক্রবার (ছুটির দিন)। সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এই বউ বাজারের কেনা বেচা চলে। তবে গতকাল বিকাল পর্যন্ত চলে। বড় বড় দোকান ও শপিংমলে বিক্রি হয় যে মানের পোশাকগুলো, ঠিক সে মানের পোশাকও সস্তা দামে পাওয়া যায় ব্যতিক্রমধর্মী এ বউ বাজারে। দামও তুলনামূলক কম থাকে।
বউ বাজারে দেখা যায়, মাটিতে ত্রিপল বিছিয়ে তার ওপর সাজানো শাড়ি, থ্রি-পিস, ওড়না, চাদর। বিক্রি হচ্ছে চুড়ি-ফিতা-দুলসহ নানা ধরনের স্যান্ডেল ও জুতা। বাদ যায়নি ছোটদের খেলনাও। বউ বাজারে বিভিন্ন কাপড়ের সেলাই করা থ্রি-পিস বিক্রি হয় ২৫০-৭০০ টাকায়।
এ ছাড়া জর্জেট, সুতি, বাটিক, শিফনের ওড়না ৭০-১৭০ টাকায়, বিভিন্ন রকমের শাড়ি ৩৫০ থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
বউ বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, দোকান ভাড়া, কর্মচারী বেতন, বিদ্যুৎ বিল, সাজসজ্জার খরচ উঠাতেই বড় দোকান বা মার্কেটে পাওয়া সমমানের পোশাক বা কাপড়ের দাম বেশি হয়। এসব কোনো খরচ লাগে না বলেই বউ বাজারে সস্তায় পোশাক বা কাপড় পাওয়া যায়। সস্তায় পোশাক বা কাপড় পাওয়া যায় বলেই সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার বউ বাজারে ক্রেতারা ভিড় করে। বর্তমানে ধনী পরিবারের নারীরাও আসছেন এখানে কাপড় কিনতে।
কর্মজীবি নারী জান্নাতুন ফেরদৌস বৃষ্টি বলেন, সামনে ঈদ, তাই পরিবারের জন্য এখানে কেনাকাটা করতে এসেছি। আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এই বাজার। এখানে শাড়ি, থ্রি-পিস, ওড়না নিয়েছি। আর ছেলের জন্য শার্ট, প্যান্ট এবং বরের জন্য লুঙ্গি নিয়েছি। এখানে কম দামে পাওয়া যায়।
নুসরাত জানায়, কম দামে অনেক ভালো ভালো কাপড় পেয়েছি। মাঝে মধ্যেই এ বাজারে কাপড় কিনতে আসি।
বউ বাজারের পরিচালনা কামিটর সহ-সভাপতি মো. আলম বলেন, ২২ বছর ধরে বউ বাজার পরিচালিত হয়ে আসছে। এতে ক্রেতারা যেমন সুফল পাচ্ছেন তেমনি বিক্রেতারাও লাভবান হতে পারছে। ঈদকে ঘিরে নতুন নতুন ডিজাইনের কাপড় আনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বউ বাজারের ব্যবসায়ীরা দিনাজপুর দোকান কর্মচারী ইউনিয়ন বউ বাজার সমিতি গঠন করেছেন। বর্তমানে সমিতির সদস্য সংখ্যা ১৭৫।