প্রেমের টানে বরিশালে আসা ভারতীয় যুবক জাভেদ খানের (২৯) মৃত্যু হয়েছে। তিনি গত ৯ অক্টোবর প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে বরিশালে এসেছিলেন।
আজ বুধবার ভোরে শেবাচিম হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। জাভেদ ভারতের উত্তর প্রদেশের হাসানপুরের বাসিন্দা।শারীরিক অসুস্থতার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে।
জাভেদের প্রেমিকা জানান, তার সাথে দেখা করতে গত রবিবার (৯ অক্টোবর) জাভেদ বরিশালে আসেন। তিনি নগরীর কাটপট্রি এলাকার হোটেল অ্যাথেনার ৪১০ নাম্বার রুম ভাড়া নিয়েছিলেন।
তিনি আরো জানান, পরের দিন সোমবার (১০ অক্টোবর) বুকে ব্যথা দেখা দিলে জাভেদকে শেবাচিম হাসপাতালের সিসিইউতেও ভর্তি করা হয়। আজ বুধবার ভোরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের পরামর্শে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নেওয়ার প্রস্তুতির মুহূর্তে জাভেদের মৃত্যু হয়।
জাভেদ অসুস্থ হয়ে পড়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তার পরিবারকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে বলে জানান ওই তরুণী।
তিনি জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে তিন বছর আগে তাদের পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। জাভেদ এর আগেও বরিশালে এসেছিলেন এবং সর্বশেষ তার সঙ্গে দেখা করতে ৯ অক্টোবর বরিশালে আসেন। তিনি আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভারতীয় নাগরিক জাভেদ খান ভারত থেকে বাংলাদেশে আসেন ও ৯ অক্টোবর লঞ্চযোগে বরিশালে আসেন এবং নগরের একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন। পরে তিনি তার প্রেমিকাকে নিয়ে ঘোরাঘুরিও করেছেন। একপর্যায় তার বুক ব্যথা অনুভব হয়। ‘
তিনি আরো বলেন, ‘জাভেদ সদর হাসপাতালে ডাক্তার দেখান। সেখানে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে বেকরকারি একটি ক্লিনিকে চিকিৎসককে দেখান। ওই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে আজ বুধবার ভোর ৪টার দিকে তিনি মারা যান। ‘
সুরতহাল রিপোর্টে তার শরীরে কোনো ধরনের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে কমিশনার আরো বলেন, ‘জাভেদের হার্টে এবং কিডনিতে সমস্যার পাশাপাশি তার লিভারেও সমস্যা ছিল। ভারতেও তিনি চিকিৎসা নিয়েছিলেন, সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে অ্যালকোহল জাতীয় জিনিস খেতে নিষেধ করেছিলেন। প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা এটা জানতে পেরেছি। ‘
মরদেহ হস্তান্তরের বিষয়য়ে ভারতীয় দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে জানিয়ে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা যেভাবে বলবে সেভাবেই মরদেহের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জাভেদের পরিবারের সাথে কথা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তাদের কোনো অভিযোগ নেই। তারপরও বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। ‘
ময়নাতদন্তকারী কর্মকর্তা ও শেবাচিম মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. রেফায়েতুল হায়দার বলেন, ‘মৃত ভারতীয় ব্যক্তির শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেশকিছু লেখা (ট্যাটু) ছিল। তিনি কিছু রোগে ভুগছিলেন। ‘
তিনি বলেন, ‘মরদেহের ময়নাতদন্ত একটি বোর্ডের মাধ্যমে সম্পন্ন করেছি। তার ভিসেরা রিপোর্ট ও আগের শারীরিক সমস্যার প্রতিবেদন পেয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা করব। ‘
জানা যায়, বরিশালের তরুণীর সাথে ফেসবুকের মাধ্যমে জাভেদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। ২০১৮ সালেও তিনি আরেকবার বাংলাদেশে এসেছিলেন।