English

23 C
Dhaka
রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
- Advertisement -

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পাওয়া চাকরি ছাড়লেন ওসি

- Advertisements -

ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পাওয়া চাকরি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম সরওয়ার তুহিন। গতকাল রবিবার তিনি ফেসবুক পোস্টে এ ঘোষণা দেন।

ফেসবুক পোস্টে গোলাম সরওয়ার তুহিন লেখেন, ‘বিদায় বাংলাদেশ পুলিশ। বিদায়বেলায় কিছু কথা। আমার বাবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর করপোরাল পদে কর্মরত ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭৩ সালে তিনি স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে চলে আসেন। আমার মা একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষিকা ছিলেন। তখন আমার জন্ম হয়নি। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জানতে পেরেছি তৎকালীন সেনাবাহিনীর মধ্যে অসন্তোষ থাকায় আমার মায়ের পরামর্শে তিনি (বাবা) চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় চলে আসেন। এসে তিনি স্থানীয় আওয়ামী রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন এবং একটি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন।’

তিনি লেখেন, ‘এরপর ধীরে ধীরে তিনি পেশা হিসেবে ব্যবসাকে বেছে নেন। বাউফল উপজেলার বাহেরচর বন্দরে আমাদের একটি টিনের আড়ত, একটি রাইচ মিল ও একটি ফার্মেসি ছিল। বেড়ে ওঠাকালীন আমার বাবাকে মাঝেমধ্যে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর লোকজন খুঁজতে আসত, কিন্তু কেন আসত তা আমরা জানতাম না। নানা অপবাদ দিয়ে আমার বাবাকে খোঁজা হতো।’

ওসি পদ থেকে পদত্যাগরী এ ব্যক্তি লেখেন, ‘পুলিশের জন্য আমার বাবা বাড়ি থাকতে না পেরে বিভিন্ন শহরে এসে ক্যানভাসারের কাজ করত জীবিকা নির্বাহের জন্য। এভাবে আত্মগোপনে থেকে তাকে অনেক দিন পার করতে হয়েছে। একবার আমাদের স্বনামধন্য এমপি আ স ম ফিরোজ নৌকা মার্কা না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন। কিন্তু আমার বাবা নৌকার বিপক্ষে না গিয়ে নৌকা মার্কায় অবিচল থেকে কাজ করেন, কার পক্ষে কাজ করেছেন তাকে আমরা চিনিও না তেমন। নীতিগত কারণে তিনি নৌকা মার্কার প্রার্থীর প্রতি অবিচল ছিলেন। কারণ, তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত ছিলেন।’

তিনি লেখেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত নৌকা মার্কা হেরে গেল, স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হলো এবং আবারও আওয়ামী লীগে যোগদান করলেন। এরপর আমাদের পরিবারের অবস্থা বিরোধীদলের চেয়েও খারাপ ছিল। এরপর আমার বাবা পুরোদমে ব্যবসায় মনোযোগ দিলেন ও সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। সে থেকে আমাদের পরিবার সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বাইরে আছি। এরপর বেশ ভালোই ছিলাম।’

গোলাম সরওয়ার তুহিন লেখেন, ‘হঠাৎ একদিন (বিএনপি ঘরানার) আমাদের বাড়ির এক মেয়ে আমার বড় ভাইকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নিজ দায়িত্বে আমাদের ঘরে চলে আসেন। আমার ভাই তখন বরিশালে ছিল। নানাভাবে মেয়েকে বুঝালাম পরিবারের সঙ্গে কথা বললাম ফিরে যাওয়ার জন্য কিন্তু তিনি অনড় ছিলেন, যাবেন না। এলাকার সব লোক মিলে বুঝিয়েও তাকে ফেরাতে পারেননি।’

তিনি লেখেন, ‘হঠাৎ রাতের বেলা পুলিশ এলো, আমার বাবা-মাকে গ্রেপ্তার করল এবং থানায় নিয়ে মামলা দিয়ে চালান দিল। বলল, আমরা না কি ওই মেয়েকে অপহরণ করেছি। আসলে কী অপরাধ ছিল সেটাই আমরা জানতাম না, পরে শুনেছি নারী নির্যাতনের নতুন আইন হয়েছে। যা হোক অনেক কিছুর পরও সে মেয়েকে নিয়েই আমার বড় ভাই এখনো সংসার করছেন। আমার বাবা-মায়ের জন্য এর চেয়ে বড় অপমান আর কিছু ছিল না। পুলিশ তো জানত, কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যা। ছেলের সুখের জন্য আমার বাবা-মা সবকিছু মেনে নিলেন। কিন্তু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অপমানের কথা ভুলতে পারলেন না। এরপরও অনেক পুলিশি হয়রানির ঘটনা ঘটেছে, কারণ আমাদের পিছনে কোনো শক্তি ছিল না। বাবা আমাকে বলেছিলেন, ‘‘যাই হোক কখনো কোনো মানুষের ক্ষতি করবে না’’। সে নীতিতেই বেঁচে আছি এবং পথ চলছি।’

পুলিশ থেকে পদত্যাগকারী তুহিন লেখেন, ‘আমার বাবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তালিকাভুক্ত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, কারোর দয়ায় বা করুণায় নয়। বীর মুক্তিযোদ্ধার কোটায় আমার চাকরি হয়েছে। যেভাবে ৫ আগস্ট দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হলো, যেভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাস্কর্যসহ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে অপমান করা হলো, ভেঙেচুরে চুরমার করা হলো, সেখানে কোনো নৈতিক অধিকারে আমি এ চাকরি করি। চাকরিকালীন আমি সব কর্মস্থলেই নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পেরেছি, তবে রাজনৈতিক কারণে কিছু কাজ করতে হয়েছে, যেহেতু আমি সরকারি চাকরি করি।’

তিনি লেখেন, ‘আমি জীবনে কখনো কোনো তদবির করিনি, যেখানে দায়িত্বে দিয়েছে সেখানেই দায়িত্ব পালন করেছি। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস আমাদের শেষ হয়েছে। এখন হয়তো নতুন স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস শুরু হবে। আমি নতুন প্রজন্মের কাছে আমার মুক্তিযোদ্ধার কোটায় থাকা চাকরিটি ছেড়ে দিলাম, তারা নতুন উদ্যমে জায়গা পূরণ করে নেবেন এবং প্রত্যাশিতভাবে দেশকে সাজাবেন- এ অনুরোধ রাখলাম।’

তুহিন আরও লেখেন, ‘আমি আমার বাবার দেখানো নীতিতেই বাকিটা পথ হাঁটব। বাবা বলেছিলেন, ‘‘যেখানে সম্মান নেই সেখান থেকে নিজেকে সরিয়ে নিও।’’ সাধারণ জনগণের কাছে পুলিশ যেভাবে অসম্মানিত হলেন, সে ইমেজ নিয়ে কীভাবে জনগণের সেবা করব। আমি আমার বাবার সম্মান রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে বিদায় জানালাম। আমি স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের জন্য আবেদনপত্র পাঠিয়ে দিলাম। তবে আইন পেশার সঙ্গেই যুক্ত থাকব। সবার জন্য শুভকামনা রইল। আমিন, জয় বাংলা, বাংলাদেশ, চিরজীবী হোক।’

এ ব্যাপারে জানতে স্বরূপকাঠি থানার ওসি মো. গোলাম সরওয়ার তুহিনের অফিসিয়াল মোবাইল নম্বরে কল করা হলে থানাটির পরিদর্শক (তদন্ত) এইচ এম শাহিন তা রিসিভ করেন। তিনি বলেন, ‘ওসি সাহেব অফিসে আসেননি।’

গোলাম সরওয়ার তুহিনের স্বেচ্ছায় অবসরের বিষয়টি জানতে চাইলে এইচ এম শাহিন বলেন, ‘আমিও শুনেছি ফেসবুকে এমন একটা স্ট্যাটাস তিনি দিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত দেননি।’

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন