উদ্বোধন হতে চলেছে দেশের প্রথম কোনো মেগা প্রকল্পের। আগামী ২১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়খালীর কলাপাড়ায় অবস্থিত দেশের সবচে বড়ো এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন। আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির শতভাগ দুষণমুক্ত এই কয়লা বিদ্যুতকেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি নয়, সশরীরে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। দেশে এদিন আসবে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণাও। আর দেশে মহামারী শুরুর পর ঢাকার বাইরে প্রথমবারের মতো সফর করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রকল্প পরিচালক শাহ আব্দুল মওলা হেলাল জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন।
তিনি জানান, উদ্বোধনের পরপরই এখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহ শুরু হবে। এর ফলে সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে শতভাগ দূষণমুক্ত কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সূচনা করবে বাংলাদেশ।
পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী (পূর্ত) মো. রেজওয়ান ইকবাল খান জানান, ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে এখান থেকে উৎপাদিত ৬২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে দক্ষিণবঙ্গের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। এর আগে গোপালগঞ্জ থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত ১৬০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করে চালু করা হয়। গোপালগঞ্জের গ্রিড থেকে ঢাকার আমিন বাজার পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজ চলমান। চলতি বছর আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ওই লাইন নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
তিনি জানান, পদ্মায় রিভার ক্রসিং লাইন নির্মাণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। সেটি শেষ হলেই খুব দ্রুত সময়ে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে।
তিনি আরও জানান, আগামী ডিসেম্বরে ওই কাজ সম্পন্ন হলেই জাতীয় গ্রিডে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে।
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী সাইম রহমান জানান, এখানে প্রতিদিন প্রায় ২৯ কোটি ছয় লাখ লিটার পানি প্রয়োজন হয়। যার ৯৫ ভাগ দ্বিতীয়বার শোধন করে কেন্দ্রে ব্যবহার করা হয়।
পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার খোরসেদুল আলম জানান, কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রতিদিন দরকার হচ্ছে ১৩ হাজার টন কয়লা। যা ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে সরাসরি বন্দরের নিজস্ব টার্মিনালে ভিড়ছে। কয়লা ব্যবহারে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য এখানে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। আছে শ্রমিকদের জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থাও।
তিনি জানান, কয়লাবাহী জাহাজ সরাসরি টার্মিনালে ভেড়ানোর পর ওই জাহাজ থেকেই সরাসরি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কনভেয়ারের মাধ্যমে কোল্ডডোরে পৌঁছে যাচ্ছে। সেখানেই মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদনের সব প্রসেসিং। যে কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের কোনো সুযোগ নেই এখানে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় বাংলাদেশের নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি)-এর মধ্যে যৌথ উদ্যোগের চুক্তি হয় পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের। পরে ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগের চুক্তি স্বাক্ষরের পর ১২ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের প্রায় ৮০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে চীনের এক্সিম ব্যাংক ও চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। মূল কাজের পুরো তদারকি করেছেন চীনের ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এদিকে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে আমাদের সকল ধরনের প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এই সফরে মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, ৩০ জনের অধিক বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতগণের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এই কর্মযজ্ঞকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দুই বছরের করোনাকালীন স্থবিরতার পর কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসছে এই জনপদে।