মোঃ আব্দুল গফুর, নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ বগুড়া জেলার শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত নন্দীগ্রাম উপজেলায় চলতি রোপা আমন মৌসুমে এবার ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। আমন মৌাসুমের মাঝামঝি এই সময় মাঠের পর মাঠ শোভা পাচ্ছে সবুজের সমারোহ। আর এ সময়েই উপজেলার বিভিন্ন মাঠে আমন ধানের লকলকে তরতাজা সবুজ গাছগুলোতে পোকামাকড় দমনে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
উপজেলার বাঁশবাড়ীয়াগ্রাম জুয়ান আলী, দামুয়াপাড়া শ্রী সনজয়, দাসগ্রাম গ্রামের ওমর ফারুক সহ বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই বুক ভরা আশা নিয়ে দিনভর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মাঠে কাজ করছেন। এই অঞ্চলের কৃষকরা বিপুল পরিমান ফসল উৎপাদন করে অত্র অঞ্চলের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করেও ৭০/৭৫ ভাগ ধান দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে থাকে।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে , এ বছর চলতি রোপা আমন মৌসুমে শুধু নন্দীগ্রাম উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় সর্বমোট ২০হাজার ২৫০হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল যা অর্জিত হয়েছে ১৯হাজার ৭৬০হেক্টর। এই জমি থেকে ৬১হাজার ১০মেট্রিকটন ধান (চাউল হিসেবে) উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।
এ বছর কৃষকরা জমিতে ব্রি ধান-৩৪, ব্রি ধান ৫১, ব্রি ধান ৪৯, ব্রি ধান ৯০ বিনা-৭, কাটারীভোগ এবং হাইব্রিড তেজসহ বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করেছে। যা এ উপজেলার চালের চাহিদা পূরন করেও বাহিরে রপ্তানী করতে পারবে কৃষকরা। এ বছর যদিও আবহাওয়া খুব একটা অনুকূলে ছিলনা, সেচের মাধ্যমে রোপা আমন চাষাবাদ করেছে কৃষকরা তবুও রোগ বালাই কম। কৃষি অফিসের সময় মত পরামর্শ পেয়ে কৃষকরা জমিতে যে পরিশ্রম করেছে তাতে বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি দেখা যাচ্ছে।
উপজেলার দাসগ্রাম, দামুয়াপাড়া, শালুকাপাড়া, বাঁশবাড়ীয়াগ্রাম, চন্ডিপুর সহ বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা গেছে মাঠের পর মাঠ যেন সবুজের সমারোহ ছড়িয়েছে।
উপজেলার দাসগ্রাম গ্রামের মাঠে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাব্বি হোসেন স্প্রে মেশিন নিয়ে আমন ধান ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। তার কাছে গিয়ে কি স্প্রে করছেন জানতে চাইলে তিনি জানালেন, আমন ধান মৌসুমের এটা মাঝামাঝি সময়, এ সময়েই ধান গামর হবে ঠিক এই সময়টাতেই ধানে রোগসহ বিভিন্ন পোকা-মাকড়ের আক্রমন হয়ে থাকে সে আরও জানায়, কীটনাশক স্প্রে করছি যাতে কোন রোগ ও পোকা-মাকড় আক্রমন করতে না পারে। একই মাঠে একটু দুরে গিয়ে আমন ধান ক্ষেতে কৃষক শামিম হোসেন সাথে কথা বললে সে জানায়, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর আবহাওয়া কিছুটা প্রতিকূলে থাকায় সময় মত বৃষ্টি না গভীর নলকূপের পানি সেচের মাধ্যমে রোপা আমন চাষাবাদ হওয়ায় এখন পর্যন্ত আমন ধানক্ষেত ভালোই আছে। ইতোমধ্যে ধান গামর হতে শুরু করেছে।
দাসগ্রাম গ্রামের কৃষক আলহাজ্ব আব্দুস সামাদ জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর আমন ধান অনেক ভালো হয়েছে যদিও সারের কিছুটা কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছিলো তারপরও বিভিন্নভাবে কষ্ট করে হলেও সার সংগ্রহ করে জমিতে প্রয়োগ করা হয়েছে। বর্তমানে ধানের বাজারও বেশ ভালো, ধানের বাজার যদি পরিবর্তন না হয়ে বাড়তির দিকে থাকে তাহলে কৃষক এবার অনেকটা লাভবান হবে বলে মনে করছি।
এছাড়াও এ উপজেলার বেশ কয়েক জন সাধারণ কৃষকদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, আমরা কৃষি অফিসের পরামর্শে সঠিক সময়ে সঠিক বয়সের চারা জমিতে সারিবদ্ধভাবে রোপন করা হয়েছে এতে করে আমাদের আমন ফসল অনেক ভালো হয়েছে। সারিবদ্ধভাবে চারা রোপনের ফলে আমন ধানে কারেন্ট পোকার আক্রমণ নেই বললেই চলে।
উপজেলা কৃষি অফিসার আদনান বাবু জানান, এ উপজেলার কৃষকরা নিয়মিত কৃষি অফিসের সাথে যোগাযোগ রাখছে এবং আমাদের পরামর্শমত ধান চাষ করেছে, তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া কিছুটা প্রতিকূলে থাকলেও রোগ- বালাই পোকামাকড় তেমন একটা নেই। বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমন ধানের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।