গোলাম রব্বানী শিপনঃ মহাস্থান বগুড়া থেকেঃ হতভাগা শাহীনুর রহমান। বগুড়া শিবগঞ্জ উপজেলার রায়নগর ইউনিয়নের মহাস্থান মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত ছানাউল্লাহ প্রামানিক অরফে (কেরু’র) পুত্র। পৃথিবীতে আসার আগেই হতভাগা শাহীনুর রহমান তার বাবাকে হারিয়েছে। সে যখন তার মায়ের গর্ভে তখনই তার বাবা ছানাউল্লাহ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। অতঃপর শাহীনুর ভূমিষ্ট হলে তার মা অনেক কষ্টে তাকে প্রীতি পালন করে বড় করে তোলেন। ৪ বোনের সবচেয়ে ছোট ও আদরে ছিলেন শাহীনুর রহমান।
মা জোস্না বেগমের মাথার ছাতা না থাকলেও ৪ মেয়ে আর ১ ছেলেকে তিনি কখনোই বাবার অভাব বুঝতে দেননি। ৪ মেয়েকে তিনি বিয়েও দিয়েছেন ভালো ঘরে। তাদেন পিতা না থাকলেও পিতার সম্পদ ছিল বেশ। সর্বশেষ আদরের ছেলে শাহীনুরকে বিয়ের পিঁড়িতে বসান। বছর পূর্বে শাহীনুর রহমান কে পারিবারিক বন্ধরে আবদ্ধ হয়ে বগুড়ার পাশ্ববর্তী জেলা জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার আফলাপাড়া গ্রামে মিজানুর রহমানের মেয়ে জয়নব আক্তার জেবুর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ে সম্পন্ন হয়। ভালোই চলছিল তাদের দাম্পত্য জীবন। কর্ম হিসেবে শাহীনুর মহাস্থান হাট ইজারা কাজে সংশ্লিষ্ট ছিলেন৷
সে প্রতিদিন মহাস্থানহাটে কাঁচা মরিচপট্রিতে টোল আদায় করতেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার শাহীনুর জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার আফলাপাড়া গ্রামে শ্বশুর বাড়ী দাওয়াত খেতে যান। শ্বশুর বাড়ীতে রাত্রীযাপন করে পরের দিন সকালে নাস্তা সেরে স্ত্রীকে রেখে সে সকাল ৬টায় মহাস্থান হাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।। বুধবার সকালে সে তার ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই ডিডি মোটরসাইকেল নিয়ে জয়পুরহাট- বগুড়া আঞ্চলিক সড়ক হয়ে মহাস্থান আসার পথে বাঁশের ব্রীজ নামক স্থানে একটি চলন্ত ট্রাক পিছন থেকে দ্রুত গতিতে তার মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এসময় শাহীনুর মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গেলে ট্রাকের চাকায় তার মাথা পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। অপর একটি সূত্রে জানা যায়, একটি শিয়াল রাস্তা পারাপারের সময় শাহীনুরের মোটরসাইকেলের সাথে ধাক্কা লাগে। এসময় মোটরসাইকেল দ্রুত গতিতে থাকায় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে যায়।
এবং সাথে সাথে পিছন থেকে একটি ট্রাক তাকে চাপা দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। মুহুর্তেই মোটরসাইকেল দুমড়ে মুচড়ে তার মৃত্যু হয়। স্থানীয়রা জয়পুরহাট কালাই থানায় অবগত করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে নিহতের পকেট থেকে মোবাইল ফোন উদ্ধার করে তার পরিবারে সংবাদ জানান৷ সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদটি প্রথমে শাহীনুরের মেজো বোন সুমানাকে জানানো হয়। সংবাদ পেয়ে সুমানা আর তার স্বামী শাকিল আহম্মেদ দ্রুত সেখানে ছুটে যান। যাওয়ার সময় বার বার ভাইয়ের বিষয়ে সে ফোনে যোগাযোগ করেন তার কি অবস্থা? ওপাশ থেকে শান্ত আর ধৈর্য ধারণ করে আসতে বলেন পুলিশ। পুলিশের এমন কথায় বুঝতে বাকি থাকে না বোন সুমানার যে তার আদরের ছোট ভাই আর বেঁচে নেই। এরপর তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখতে পান তার ভাইয়ের রক্তাক্ত নিথর মরদেহ রাস্তার পাশে পুলিশ ব্যাগে পড়ে আছে। তার কিছু অদূরে দুমড়ে মুচড়ে পড়ে আছে শাহীনূরের শখের ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই ডিডি মোটরসাইকেল। লাশের পাশে বসে বোন সুমানার চলে আহাজারি। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে কালাই থানা হেফাজতে নিয়ে পরে স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করেন।
এবিষয়ে নিহতের দুলাভাই শাকিলের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমার স্ত্রীসহ তার পরিবার ও এলাকাজুড়ে কেউই শাহীনুরের মৃত্যু কোনো ভাবেই মানতে পারছেন না। একটু দম নিয়ে তিনি বলেন, আমার শালা তো আর ফিরে আসবে না। কিন্তু তিনি চান না, আর কোনো মা–বাবার বুক সড়ক দুর্ঘটনায় এভাবে খালি না হোক। তিনি বলেন বেপরোয়া ট্রাক তাকে চাপা দিয়ে পালিয়েছে।
এই ট্রাকটি শনাক্ত করে চালকের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন তিনি। এ বিষয়ে কালাই থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মাহবুবুর রহমান জানান, দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ডায়েরি করা হয়েছে।
এদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শাহীনুরের এমন মৃত্যু কেউ মানতে পারছে না। তার আকষ্মিক মৃত্যুতে এলাকা জুড়ে এখনো চলছে শোকের মাতম।