জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি ব্যাটারিচালিত রিকশার মধ্যে দুর্ঘটনায় এক ছাত্রীর মাথার খুলিতে গুরুতর জখম হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাবের সামনের সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রুত এসব রিকশা ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন সকলে তবে নিরাপত্ত শাখা বলছে শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠনের নেতাদের কারণে বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
আহত শিক্ষার্থীর নাম পূজা মজুমদার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তাঁকে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় করে বিশমাইলের দিকে যাচ্ছিলেন পূজা। শিক্ষক ক্লাবের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি ব্যাটারিচালিত রিকশা তাঁর রিকশাকে ধাক্কা দেয়। এতে পূজার রিকশাটি উল্টে যায়। রিকশা থেকে পড়ে তিনি মাথা, কাঁধ ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পান। তাঁর মাথা থেকে রক্তপাত হয়েছে। পরে তাঁকে সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পূজাকে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভিজিটিং কনসালটেন্ট সোহেল আহমেদ বলেন, ‘ওই রোগীকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তাঁর মাথার খুলিতে বেশকিছু গুরুতর জখম আছে। এজন্য আগামীকাল (বুধবার) অস্ত্রোপচার করা হবে। পর্যায়ক্রমে আরো অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
এদিকে ব্যাটারিচালিত রিকশার ধাক্কায় শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী এসব রিকশা বেপরোয়া গতিতে চালানোর কারণে রিকশা থেকে পরে গিয়ে কিংবা ধাক্কায় আহত হয়েছেন। যদিও একটা সময় পর্যন্ত এসব রিকশা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসব রিকশা চালানোর কোনো অনুমতি ছিল না। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার পর হঠাৎ করেই বেড়ে যায় এসব রিকশার চলাচল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন এবং তার শাখার নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় এসব রিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে সে প্রচেষ্টা থমকে যায়।
এ বিষয়ে স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী মিঠু ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাসের অটোরিকশার যে গতি তাতে যে কোনো সময় আরও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়েল সড়কগুলোতে শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারবে না। তাই আমি মনে করি এসব রিকশা ক্যাম্পাসে যাতে না চলে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসানের নজর দেওয়া প্রয়োজন। আমি এধরনের রিকশা বন্ধের দাবি জানাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) জেফরুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘দুইটি অটোরিকশার গতি বেশি ছিলো। ওই ছাত্রীর রিকশাকে ধাক্কা দেওয়ার পর অপর রিকশাওয়ালা রিকশাসহ সেখান থেকে পালিয়ে যায়। আমরা তাঁকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। ক্যাম্পাস খোলার পর থেকেই ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
তিনি আরো বলেন, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে একটি নোটও পাঠিয়েছি এসব রিকশা বন্ধের জন্য। আমাদের নিরাপত্তা শাখার সকলেই আপ্রাণ চেষ্টা করেছি এসব রিকশা বন্ধ করতে কিন্তু যখন নিজেদের প্রয়োজন হয় তখন কি শিক্ষক আর কি শিক্ষার্থী সকলেই এসব রিকশাকে সমর্থ দিয়েছে। এ ছাড়া যখনই এসব রিকশা বন্ধ কিংবা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে তখন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী থেকে সাধারণ শিক্ষার্থী সকলেই আমাদের কাজে বাধা দিয়েছে। এমনকি ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার যে কোনো বিষয়েই তারা (ছাত্র সংগঠনের নেতারা) হস্তক্ষেপ কর, কাজ করতে দেয় না। সব কিছুতেই আমাদের ছাত্ররা মালিক তাই কিছু করা যায় না।”