বগুড়ার মহাস্থানে সিএনজি চালিতো অটোরিকশা ও যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের ৩জন নিহত ও ৩জন আহতের ঘটনা ঘটেছে।
নিহতরা হলেন, সিএনজির যাত্রী আশরাফুল ইসলাম (৪৫) স্ত্রী পারুল বেগম (৩৫) ও তাদের ৩ মাসের নাতি রেজওয়ান। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকাল ৮ টায় গাইবান্ধা সাঘাটা এলাকার আশরাফুল ইসলাম সিজার রুগী পুত্রবধূ ও স্ত্রী পারুল ও কোলের সদ্য জন্মা ফুটফুটে শিশুকে নিয়ে সিজার সেলাই খুলতে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। মহাস্থান করতোয়া ব্রীজের পাশে হাতিবান্ধা নামক স্থানে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছিল।
এসময় বগুড়া থেকে রংপুরগামী হাবিব এন্টারপ্রাইজ নামের একটি যাত্রীবাহী বাস জ্যামে আটকে ছিল। বাসের চালক একটু সুযোগ নিয়ে জ্যাম থেকে পাশ কাটিয়ে উল্টোপথে বেপরোয়া গতিতে সিএনজি চালিতো অটোরিকশার উপড়ে তুলে দেয়। এসময় সিএনজি চালিতো অটোরিকশা দুমড়ে মুচড়ে বাসের নিচে আটকে থাকে। স্থানীয়রা দ্রুত ছুটে এসে তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন। ততক্ষণে সিএনজির তলে থেকে যাত্রীরা বাঁচার আকুতি করেন। স্থানীয়রা সকল চেষ্টার ব্যার্থ হয়ে রাস্তার কাজে নিয়োজিত এস্কেপটার অর্থাৎ ভেকু চালককে অনুরোধ করে বাসটি উল্টে দিয়ে নিচ থেকে চালক সহ ৩জন ও নিহত শিশুকে উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এরপর একে একে বের করা হয় একই পরিবারের দাদা-দাদির ২টি নিথর লাশ।
নিহত আশরাফুল ইসলাম গাইবান্ধা সাঘাটা এলাকার বাসিন্দা। তাঁর পিতার নাম ছহির উদ্দিন। নিহতের বিয়াই নিজাম উদ্দিন, বিয়াই বিয়ান ও নাতীর শোকে কাতর হয়ে আহাজারি কণ্ঠে জানান, বগুড়া সদরের বারোপুর মধ্যোপাড়া গ্রামে জামাই রাসেদুল ইসলামের বাসাবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করতেন। হাসপাতাল থেকে ফিরে সেখানেই তাঁদের যাওয়ার কথা ছিল। বাড়িতে ফিরলো ঠিকই কিন্তু লাশ হয়ে। স্থানীয় এলাকার আজিজুল নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বেপরোয়া বাস চালকের গাফিলতির কারণে এই দূর্ঘটনা প্রায় ২০মিনিট বাসের নিচে সিএনজি আটকে ছিল এসময় শিশুটির কান্না সবার চোখে পানি ঝড়িয়েছে।
কিন্তু নিরুপায় এত বড় একটি যান্ত্রিক বাস সড়ানো কারো পক্ষে সম্ভব হয়নি। পরে ভেকু দিয়ে সড়ানো হয়েছে। এদিকে সবাই যখন হতাতদের উত্তর করতে ব্যস্ত ঠিক তখনি গাড়ীর চালক গাড়ীর নেমপ্লেট (নাম্বার) খুলে গাড়িটি অজ্ঞাত করেন বলে অনেকেই অভিযোগ করে বলেন। বগুড়া সদর ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার (এসও) ছাড়াও শিবগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা উদ্ধার কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
এবিষয়ে বগুড়া ফায়ার স্টেশন এর উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুস সালাম জানান, দূর্ঘটনার পরপরই সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। আহতদের স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরে সিএনটির ভিতর থেকে স্বামী স্ত্রীর ২টি লাশ উদ্ধার করে হাইওয়ে পুলিশের নিটক হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খায়রুল ইসলাম বলেন, সংবাদ পেয়ে দূর্ঘটনাস্থলে ২টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি প্রাথমিক ভাবে ধারণা ও নিহতদের বরাত দিয়ে জানান, গুড়িগুড়ি বৃষ্টির কারণে এই দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়াও দূর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ীর কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা সবকিছু মাথায় রেখে নিশ্চিত করে দূর্ঘটনার কারন বের করে চালকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।