শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়া জনগোষ্ঠী কিছুটা সন্ত্রাসী কায়দায় চাঁদাবাজি করছে ফলে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে এলাকাবাসী। এলাকাবাসী এই সমস্যার সুরাহার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে। তাদের দাবি হিজড়ারা নিয়মিত সারা শিবগঞ্জে সন্ত্রাসী কায়দায় চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। যদি শিবগঞ্জের কোথাও বিয়ের আয়োজন করা হয় তাহলে সেখানে গিয়ে তারা বড় অংকের একটা চাঁদা দাবি করে বসে, ফলে প্রায়শই বিপাকে পড়েন বরযাত্রীসহ কনে পক্ষের লোকজন।
এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে গত ১০ জুন বৃহস্পতিবার শিবগঞ্জ পৌর এলাকার কলেজ পাড়ায়, ঐদিন মাহবুবুর রহমানের পুত্র সাইদুর রহমান সনি বিয়ে করে নিয়ে আসলে তার বাড়িতে হিজড়ার দল গিয়ে হাজির হয় তারা সেখানে ৫০০০ টাকা চাঁদা দাবি করে। মাহবুবুর রহমানের পরিবার শিবগঞ্জ থানায় ফোন দিলে থানা পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। পুলিশ আসা দেখে হিজড়ার দল আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তাদের মারমুখী আচরণ ও উলঙ্গ নৃত্যে আশ-পাশের লোকজন জড়ো হয়ে যায়। তখন তাদেরকে ১০০০ টাকা দিলে তারা সেখান থেকে চলে যায়। শুক্রবার (১৮ জুন) পৌর এলাকার তেঘরী গ্রামের মোস্তা সরদারের বাড়িতে গিয়ে ১৫০০ টাকা, এবং একই দিনে বিহার ইউনিয়নের নাটমরিচাই গ্রামের জৈনক দিনমজুর ফারুক এর মেয়ের বিয়েতে গিলে তার ৫০০০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করলে ভুক্তো ভোগীর পরিবার অসহায় হওয়ায় ১০০০ টাকা দিতে চাইলে তারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ সহ উলুঙ্গ নৃত্য শুরু করে।
তারা উপায়ন্ত না পেয়ে মানুষের নিকট ধার করে ৫০০০ টাকা প্রদান করলে হিজড়ারা চলে যায়। এব্যাপারে ফারুকের স্ত্রীর সাথে কথা বললে তিনি জানায় হামার স্বামী একজন দিনমজুর অনেক কষ্টে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছি তার উপর হিজড়ারা এসে মরার উপর শুলের ঘা চড়াচ্ছে মান সম্মানের ভয়ে টাকা দিয়ে দিছি বা, কি করমো। এছাড়া কিছুদিন পূর্বে বন্তেঘরী গ্রামের সিরাজুল ইসলামের পুত্র ওমর ফারুক বিয়ে করে নিয়ে আসলে সেখানে গিয়ে হিজরার দল ৫০০ টাকা,উপজেলা সদরের গণেশ প্রসাদ এর ভাতিজির বিয়েতে ১২০০ টাকা, এছাড়া কোথাও কোন বাচ্চার জন্ম হলে এরা সেখানে এসে চাঁদা দাবি করে এবং তাদের দাবিকৃত চাঁদার টাকা নিয়ে সেখান থেকে তারা চলে যায়।
এখানেই শেষ নয় হাট-বাজার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এই হিজড়াদের অত্যাচার দিন দিন বেড়েই চলছে।এভাবেই প্রতিনিয়ত শত শত মানুষ এই সকল হিজরাদের খপ্পরে পড়ে। ভুক্তভোগীদের মান সম্মান ও সাথে থাকা আপনজনদের অপমানের ভয় তাদের দাবিকৃত চাঁদা দিয়ে দেয়।
ভুক্তভোগী রংমিস্ত্রি জাহাঙ্গীর আলম বলেন এদের টাকা তোলার বিষয়টিকে অনেকে স্বাভাবিক মনে করেন। কিন্ত সাধ্যমতো টাকা দিয়েও তাদের কাছ থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে হিজড়াদের আচরণও বদলে গেছে। আগে সাহায্য চেয়ে টাকা নিলেও এখন জোর জবরদস্তি করে টাকা আদায় করছে। এখন শিবগঞ্জ পৌর সহ বিভিন্ন ইউনিয়নে এক নতুন আতঙ্ক হিজরা জনগোষ্ঠী। সাধারণ মানুষ দ্রুত প্রতিকার চায় প্রশাসনের কাছে।
করনা মহামারীর কারনে সাড়া দেশে যখন অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে হিজড়া রাও তার ব্যতিক্রম নয়। ঢাকা সহ বিভিন্ন স্থান থেকে কর্মহীন হিজড়ারা শিবগঞ্জে এসে অবস্থান নিয়েছে। হিজড়াদের সাথে কথা বললে তারা জানায় আমরা হিজড়া আমাদের অনেকে অন্য দৃষ্ঠিতে দেখে, কোথাও গেলে কোন কাজ দেয় না আমাদেরও তো পেট আছে, খাইতে হয়। আমাদের কর্ম নেই, মাথা গোজার ঠাই নেই, কোথা ও থেকে তো আমরা কোন সাহায্য সহযোগিতা পাই না, কেউ কি কখন দেখেছে আমাদের জীবন যাপন কি ভাবে করছি। শিবগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবার তথ্যমতে শিবগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ১০০টি হিজড়া রয়েছে এর মধ্যে ২০ জন ভাতা পায়।
শিবগঞ্জ উপজেলা তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়া কমিটির সভাপতি মাসুম ইসলাম মিন্টু ওরফে মুক্তা এর সাথে কথা বললে সে জানায় বর্তমান সরকার আমাদের তৃতীয় লিঙ্গদের জন্য অনেক কিছুই করেছে কিন্তু বহিরাগতরা কর্মহীন হয়ে পড়ায় শিবগঞ্জ এসে এধরনের কাজ করছে। আমি তাদের বাঁধা দিতে পারবো না কারন আমি তো তাদের মুখে অন্য তুলে দিতে পারবো না। এদের মুখোমুখি অবস্থান নিলে আমার জীবনের নীরাপত্তা কে দিবে।
জোর করে টাকা আদায়ের কথা অস্বীকার করে তিনি আরো জানান বিয়ে তো মানুষ প্রতিদিন দেয় না আমরা তো আর তাদের বাসায় প্রতিদিন যাই না। বিয়েতে যদি লক্ষ টাকা খরচ করতে পারে তাহলে আমাদের পেট চালানো তাগিদে অল্প কিছু টাকা পয়সা দিতে আপত্তি কোথায়।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে কুলসুম সম্পার সাথে কথা বললে তিনি জানায় লিখিত কোন অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। কর্মহীন এসব তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠির জন্য অতি দ্রুত সরকারি প্রনোদনার ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।