পাবনায় হতদরিদ্রদের মাঝে উন্নত জাতের বাছুর বিতরণ প্রকল্পের নামে বরাদ্দ ৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্প অনুযায়ী সুফলভোগী ১০ জন নারীকে একটি করে বাছুর দেওয়ার কথা থাকলেও শুধু ফটোসেশন করার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
গরুর বাছুর দেওয়ার কথা বলে ডেকে এনে শুধু ফটোসেশন করায় হতাশ ওই সকল দুঃস্থ নারীরা। ফটোসেশনের দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তাদের গরুর বাছুর বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। প্রকল্পের টাকা পুরোটাই কৌশলে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের রেলবাজার এলাকার মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থা নামের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এম এস আলম বাবলুর বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা ব্যাপক সমালোচনা করছেন।
ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী জানান, গত ৩০ ডিসেম্বর সকালে বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের (বিএনএফ) আর্থিক সহায়তায় মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থা এনজিও’র উদ্যোগে দশজন দুস্থ নারীকে বাছুর দেওয়ার কথা বলে রেলবাজারে নিয়ে আসা হয়। নিজের পরিচিত একটি খামার থেকে দশটি বাছুর গাড়িতে করে নিয়ে আসেন এনজিওটির নির্বাহী পরিচালক এম এস আলম বাবলু। এরপর এলাকার কিছু ব্যক্তিকে তার বাসভবন সংলগ্ন এনজিও’র সামনে ডেকে এনে দশজন নারীকে দাঁড় করিয়ে গরু দেওয়ার ফটোসেশন করেন।
পরে ওই দুস্থ নারীদের বাছুর না দিয়ে খিচুড়ি-ডিম খাইয়ে বিদায় করা হয়। এরপর বাছুরগুলো আবার একই গাড়িতে করে একই খামারে ফেরত দিয়ে আসা হয়। সেখানে উপস্থিত অনেকেই গরু প্রদানের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী পরিচালক বাবলু জানান পরে দেওয়া হবে।
কুবিরদিয়ার মাঠপাড়া গ্রামের আলম হোসেনের মেয়ে খুশি খাতুন স্বামী পরিত্যক্তা হওয়ার পর বাবার বাড়িতে এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে বসবাস করেন। অন্যের বাড়িতে ও মাঠে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতেন। তিনি বলেন, ’প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলে আমাকে ডেকে নিয়ে যায় ওই এনজিওর লোকজন। বাছুর হাতে ধরিয়ে ছবি তোলেন তারা, কিন্তু আমাকে বাছুর দেয় নাই। বলছে, এবার অন্য এলাকার লোকদের দেব, পরেরবার তোমাকে দেব। পরে খিচুরি খাওয়ার পর বাড়িতে চলে আসি। তবে এর আগে একবার আমাকে একটা ছাগল দিয়েছিল বাবলু কাকা। তবে সেজন্য আমার কাছ থেকে নগদ ১৩০০ টাকাও নিয়েছিল।’
অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করা অপর এক নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের গাভী দেবার কথা বলে ট্রেনিংয়ে ডেকে নিয়ে যান এনজিওর লোকজন। ট্রেনিং শেষে আমাদের বাছুর হাতে দিয়ে ছবি তুলে বাড়িতে ফেরত পাঠিয়েছেন। তারা বলছেন, এখন না, পরে বাছুর দেব। সেখানে আমরা দশজন ছিলাম, এখন পর্যন্ত বাছুর পাইনি।’
যে গাড়িতে বাছুরগুলো বহন করা হয়, সেই গাড়ি চালক শুভ দাস বলেন, ‘ওইদিন আমার গাড়ি নিয়ে মথুরাপুর এলাকার একটি গরুর খামার থেকে ১০টা বাছুর নিয়ে রেলবাজার বাবলু সাহেবের বাসার সামনে নিয়ে যাই, পরে অনুষ্ঠান শেষে ওখান থেকে ওই বাছুরগুলো আবার মথুরাপুরের ওই খামারে ফেরত নিয়ে যাই। কেন নিল আবার কেনইবা ফেরত পাঠালো আমি জানি না।’
এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, ‘আমাকে ওই অনুষ্ঠানে অতিথি করা হয়েছিল। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে যেতে পারিনি। প্রকল্পটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা নেই। যদি শুধু ফটোসেশন করা হয় তদন্তসাপেক্ষে প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের (বিএনএফ) উপ-মহাব্যবস্থাপক (কর্মসূচি) মোস্তফা কামাল ভূঞা বলেন, ‘বিশেষ প্রকল্পের আওতায় মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থা নামের এনজিওকে আমরা ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। তার মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৩ লাখ টাকা দিয়েছি। কার্যক্রমে সন্তোষজনক হলে বাকি ২ লাখ টাকা দেওয়া হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের রিপোর্টে ইউএনও’র প্রত্যয়ন লাগবে। কয়েক দিনের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। এখনও তার রিপোর্ট হাতে পাইনি। আমরা বিষয়টি পর্যক্ষেণ করছি। রিপোর্ট আসার পর যাচাই-বাছাই করে দেখব, ঘাপলা পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এম এস আলম বাবলু বলেন, ‘স্থানীয় রাজনীতির স্বীকার আমি। আমি কোনো খামার থেকে গরু আনি নাই। আমি শরৎনগর হাট থেকে বাছুর কিনেছি। যার রশিদ আমার কাছে আছে।’
এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।