কেউ মানসিক ভারসাম্য হারালে তার পরিচয়,আচার-আচরণে পরিবর্তন ঘটে। তখন আমরা তাকে বলি মানসিক ভারসাম্যহীন বা পাগল। আর এসব মানুষের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য ১৯৫৭ সালে পাবনার হেমায়েতপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় মানসিক হাসপাতাল,পাবনা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা সহ অন্যান্য সেবার মানোন্নয়ন চোখে পড়ার মতো হয়নি।
বর্তমানে হাসপাতালটিতে ভর্তিরত মানসিক রোগী রয়েছেন ৩৯০ জন। যার মধ্যে ২৭২ জন পুরুষ ও ১১৮ জন মহিলা রোগী।
অসুস্থতার লক্ষণ ও হাসপাতালে রোগীকে ভর্তিঃ হাসপাতালের কিছু রোগী সুস্থ্য মানুষের মতো, সুন্দর করে কথা বলেন।অতিরিক্ত কল্পনা থেকেই এমন কথা বলেন জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এটাই অসুস্থতার লক্ষণ। অনেকেই অভিযোগ করে থাকেন সুস্থ্য মানুষকেও এখানে অসুস্থ্য রোগী বলে ভর্তি করানো হয়। এ বিষয়ে হাসপাতালের অ্যাডমিশন বোর্ডের চিকিৎসকেরা বলেন,সাধারণত এখানে সুস্থ্য রোগীকে ভর্তি করানো হয় না। যে কাউকে ভর্তি করানোর আগে মেডিকেল বোর্ড পরীক্ষা করে নেয়।
সুস্থ্য হয়েও বাড়ি ফিরতে পারেনি ১০ রোগীঃ তবে এদের মধ্যে সুস্থ্য হয়েও বাড়ি ফিরতে পারেনি ঠিকানাবিহীন ১০ জন রোগী। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাইকোর্টের মাধ্যমে এদেরকে নিজ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হাসপাতাল থেকে মাঝেমধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আনিসুজ্জামান বাবুল বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জমিজমার বিষয়টি গুরুতর হলে তখন রোগীর সাথে পরিবার যোগাযোগ রাখেনা। আবার অনেক পরিবার আত্মসম্মানের কথা ভেবে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এতে সুস্থ্য হওয়ার পরও বাড়ি যেতে পারেন না অনেক সুস্থ্য রোগী।
হাবিপ্রবির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন বলেন, ভূঁল ঠিকানা দিয়ে রোগীকে ভর্তি করানো হলে তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া যেন তেন কথা নয়। এ জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রত্যক্ষ প্রমাণ নিয়ে রোগীকে অ্যাডমিট করতে হবে।
এ বিষয়ে হাসপাতালটির পরিচালক বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে রোগীর পরিবারকে খোঁজার চেষ্টা করেছি। পত্র পত্রিকায় নিখোঁজ সংবাদ ছেপেছি।এর পরেও রোগীর পরিবারের লোকজনের খোঁজ পাওয়া যায় নি।
জনবল সংকটঃ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে এ হাসপাতালে সর্বমোট ৪৫২ টি পদ রয়েছে। যার মধ্যে চিকিৎসক ও কনসালটেন্ট এর ৩০ টি পদের বিপরীতে ১৪ জন চিকিৎসক, ২ জন কনসালটেন্ট কর্মরত রয়েছেন এবং শূণ্য পদ রয়েছে ১৪ টি। প্রশাসনিক দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন অনেকেই। ২য় শ্রেণির কর্মচারীর মোট ৩১৬ টি পদে বর্তমানে কর্মরত ২৭৫ জন(এদের বেশিরভাগই সেবিকা) এবং শূণ্য পদ ৪১ টি। একই সাথে ৩য় শ্রেণির কর্মচারীদের ১১৯টি পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন ৮৮ জন এবং শূণ্য পদ ৩১। সব মিলিয়ে শূণ্য পদ মোট ১১৯ টি।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ডাঃ রতন কুমার রায় সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, প্রথমত চিকিৎসক সংকট রয়েছে।প্রতিনিয়তই আমরা নিয়োগ দিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও বেশ কিছু পদে জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে।
খাবারের মানোন্নয়ন এখনো হয়নিঃ ৪ বেলা খাবার দেওয়া হলেও গুণগত মান এখনো পর্যন্ত রোগীকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। একজন মানসিক রোগী বলেন, যে খাবার দেয়, তা খেতে পারিনা।নিজের উপর জোর করেই খেতে হয়, আবার পেটও ভরে না।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রত্যেক রোগীর জন্য দৈনিক ১২৫ টাকা বরাদ্দ থাকলেও ভ্যাট ও অন্যান খরচ বাদ দিয়ে শেষে ১০০ টাকার মতো অবশিষ্ট থাকে। বর্তমানে চাউল,সবজি,মাছ,মাংসের দাম পর্যাপ্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় এই টাকা দিয়ে একজন রোগীকে সন্তুষ্ট রাখা কষ্টকর। তাছাড়া বিশেষায়িত হাসপাতাল বলে এখানে বাইরের খাবার অনুমোদিত নয়।তাই রোগীরা চাইলেও পছন্দের খাবারটি খেতে পারেনা।
ডাক্তারদের জন্য পরিবহণ প্রয়োজনঃ এখানকার চিকিৎসকেরা বলেন, হাসপাতালে আসা যাওয়ার সড়কটি খুব একটা উন্নত নয়। মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় আমাদের। তাই যাতায়াতের জন্য অফিশিয়াল পরিবহন ব্যবস্থা চালু করা হলে ভালো হতো।