মহানায়িকা সুচিত্রা সেন ওপার বাংলার মানুষ হিসেবে পরিচিত হলেও তার পৈত্রিক নিবাস এই বাংলাদেশেই। পাবনা জেলা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনে রয়েছে তার পৈত্রিক বাড়ি। এই বাড়িতেই তার জন্ম ও শৈশব কেটেছে। বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। বাবা-মায়ের পঞ্চম সন্তান ছিলেন সুচিত্রা।
আর এ কারণেই পাবনা তথা বাংলাদেশিদের আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন তিনি। তার স্মৃতিকে সম্মান জানিয়ে বর্তমানে মহানায়িকার বাড়িতে গড়ে তোলা হয়েছে ‘কিংবদন্তী মহানায়িকা সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা’।
সুচিত্রা সেন সম্পর্কে জানাতে ও তার স্মৃতি রক্ষার্থে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ে তোলা সংগ্রহশালায় মহানায়িকার বিভিন্ন ছবি, জীবনের বিভিন্ন তথ্য সম্বলিত বিলবোর্ড, পুস্তিকা, সিনেমার পোস্টারসহ রয়েছে নানা নিদর্শন। বাড়ির আঙিনায় স্থাপন করা হয়েছে সুচিত্রার একটি ম্যুরাল। প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে সুচিত্রার বিশালাকৃতির এ প্রতিকৃতি।
বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে দৃষ্টিনন্দন সব ফুলের গাছ। বাড়ি জুড়ে ছড়িয়ে আছে মহানায়িকার স্মৃতি। আর তাতে মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। সুচিত্রার পৈত্রিক এ বাড়িটিকে পূর্ণাঙ্গ আর্কাইভে পরিণত করার দাবি রয়েছে পাবনাবাসীর।
সুচিত্রা সেন সম্পর্কে জানতে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের অসংখ্য মানুষ তার বাড়িতে ভিড় জমান। অন্য জেলা থেকে পাবনায় আসা ভ্রমনপিপাসুরা সুচিত্রার বাড়ি দেখতে এসে নিজেদের মুগ্ধতা প্রকাশ করেন।
সংগ্রহশালা দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্মচারী বলেন, ‘কেয়ারটেকার হিসাবে আছি ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে। সোমবার সপ্তাহিক ছুটি ছাড়া প্রতিদিন ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে সংগ্রহশালা।
এখানে প্রতিদিন ২০-২৫ জনের বেশি দর্শনার্থী আসেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দর্শনার্থী ছাড়াও কলকাতা থেকেও প্রায়ই দর্শনার্থীরা আসেন। তারা সংগ্রহশালাটি দেখে মুগ্ধ হন, আনন্দিত হন।’
সুচিত্রা সংগ্রহশালার দর্শনার্থী হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সৌরভ কুমার রায় বলেন, সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িটি আমি ঘুরে দেখেছি। সংগ্রহশালাটি ঘুরে বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়িকা সম্পর্কে অজানা অনেক কিছু জানতে পেরেছি।’
দর্শনার্থী সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী কুলসুমা জান্নাত বলেন, ‘পাবনাবাসীর আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন সুচিত্রা সেন। তাকে কখনও সরাসরি দেখার সৌভাগ্য হয়নি। বিভিন্ন পত্রিকা থেকে তার সম্পর্কে জেনেছি। যতটুকু জেনেছি তাতে আমার মনে হয়েছে, সেই সময়ে সমাজের আধুনিক ধারা তিনি এনেছিলেন। আমরা তাকে গভীরভাবে স্মরণ করছি।’
পাবনার জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, আমরা ১৭ জানুয়ারি প্রয়াণ দিবসের স্মরণসভায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকি,এর মাধ্যমে মহানায়িকাকে স্মরণ করার পাশাপাশি আমাদের ঐতিহ্যকেও তুলে ধরা হয়।’
এ সময় সংগ্রহশালা ঘিরে স্থানীয়দের কোনও পরিকল্পনা থাকলে তা জেলা প্রশাসনকে অবহিত করলে আলোচনা সাপেক্ষে তারও বাস্তবায়ন করা যেতে পারে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে দক্ষিণ কলকাতার বেসরকারি হাসপাতাল বেলভিউতে ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। ১৯৭২ সালে তিনি রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পদ্মশ্রী পান এবং ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বাংলাবিভূষণ সম্মাননা লাভ করেন।