নাটোরে করোনাভাইরাস পরীক্ষার হার কমলেও লাফিয়ে লাফিয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা। নাটোরে আজ সংক্রমণের হার বেড়ে সর্বোচ্চ ৬৭.৩ এ পৌঁছেছে। গত রবিবার সংক্রমণের হার ছিল ৫১। গত ২৪ ঘণ্টায় ৫২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে ৩৫ জন শনাক্ত হয়েছেন। জেলায় মোট আক্রান্ত ১৮৯৮ জন এবং সুস্থ ১৫০১ জন।
আক্রান্তদের মধ্যে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৯ জন এবং হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৩৪৫ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২৭ জন। এদিকে ৩১ আসনের করোনা ওয়ার্ডের আজ মোট ৩৯ রোগী ভর্তি রয়েছেন। হাসপাতালের ইয়োলো জোনে করোনা আক্রান্ত এসব রোগীদের রাখা হয়েছে। প্রশাসন সহ স্বাস্থ্য বিভাগের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি সচেতন মহলের।
নাটোর রেডজোনে অবস্থান করলেও লকডাউন না দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠে রয়েছে পুলিশসহ জেলা প্রশাসন। করোনা সংক্রমণ রোধে গতরাতে জরুরীভাবে ভার্চুয়াল মিটিং করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ, জেলা ও পুলিশ প্রশাসন সহ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। এ সময় জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ ও পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, নাটোরবাসীকে নিরাপদে রাখতে আজ সোমবার থেকে কঠোর অবস্থানে যাবে প্রশাসন। স্বাস্থ্যবিধি মানতে এবং মাস্ক ব্যবহার শতভাগ নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে থাকবেন। প্রয়োজনে জরিমানার পাশাপশি কারাদণ্ডও দেওয়া হবে করোনার সরকারী নির্দেশ অমান্যকারীদের। কোনভাবেই করোনাভাইরাস বিস্তার করতে দেওয়া হবে না।
সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক পরিতোষ কুমার রায় জানালেন, নাটোরে করোনার সংক্রমণ ক্রমেই বাড়ছে। ফলে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত রেড জোন ওয়ার্ডের ৩১টি বেড অনেক আগেই পূর্ণ হয়েছে। বাধ্য হয়ে ইয়েলো ওয়ার্ডে শনাক্ত হওয়া রোগীদের রাখতে হচ্ছে। সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসার কথা চিন্তা করে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ইয়েলো জোনে শনাক্ত হওয়া করোনা রোগীর উপস্থিতি ঝুঁকি বাড়াচ্ছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওয়ার্ডের মাঝে সারিবদ্ধভাবে আলমারি রেখে রোগীদের আলাদা করা হয়েছে। এরপরও কিছুটা ঝুঁকি হয়তো থেকেই যাবে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, করোনা উপসর্গ নিয়ে কোনো রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হলে তাঁকে ইয়েলো জোনে রাখা হতো। পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হলে রাখা হয় রেড জোনে। আর নেগেটিভ হলে পাঠানো হয় হাসপাতালের অন্য ওয়ার্ডে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নাটোরে গত ১১ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত এক সপ্তাহে রোগী শনাক্ত হয় ১৪ জন। পরের সপ্তাহে, অর্থাৎ ১৭ থেকে ২৩ মে পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয় ৪৯ জন। সর্বশেষ ২৪ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৩০ জন। গত ছয় দিনে নাটোরে শনাক্তের হার ছিল গড়ে ৪০ শতাংশের ওপরে। এ পর্যন্ত নাটোর সদর হাসপাতাল ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মিলে জেলার মোট ২৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন প্রায় দুই হাজার।
জেলা সিভিল সার্জন কাজী মিজানুর রহমান জানান, স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় নাটোরে সংক্রমণের হার ক্রমে বাড়ছেই। এতে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। তা-ও যেসব রোগীর অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে, শুধু তাঁদেরই ভর্তি করা হচ্ছে। এ অবস্থায় সবার স্বার্থে সবাইকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। তা না হলে পরে আফসোস করে লাভ হবে না।